1. akhterbw@gmail.com : Akhtaruzzaman Bhuyan : Akhtaruzzaman Bhuyan
  2. adminmonir@gmail.com : Monirul Islam : Monirul Islam
  3. jmitsolution24@gmail.com : support :

ধীবর বিদ্যানিকেতনের বিশেষ কার্যক্রম

মানতা সম্প্রদায়ের জন্ম-মৃত্যু থেকে শুরু করে সবকিছুই নৌকায়। নৌকাকেন্দ্রিক জীবনযাপন হওয়ায় তাদের কাছে পড়ালেখা যেন আকাশের চাঁদ। এজন্য সম্প্রদায়টির বেশিরভাগ সদস্যই নিরক্ষর। নিরক্ষর এই সম্প্রদায়ের শিশুদের শিক্ষিত করতে গড়ে উঠেছে মেঘনাপাড় ধীবর বিদ্যানিকেতন। স্কুলটি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মজুচৌধুরীরহাট এলাকার মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত।

জন্ম-মৃত্যু থেকে শুরু করে শৈশব-কৈশোর সবকিছুই নৌকায়। এজন্য সম্প্রদায়টি স্থানীয়দের কাছে ভাসমান জেলে ও মান্তা হিসাবে পরিচিত। নৌকাকেন্দ্রিক জীবনযাপন হওয়ায় এদের কাছে পড়ালেখা যেন আকাশের চাঁদ।

জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর মজুচৌধুরীরহাট এলাকায় চল্লিশ বছর ধরে নদীতে বসবাস করছেন ১১৯টি ভাসমান জেলে পরিবার। শিক্ষার আলো বঞ্চিত এই পরিবারগুলোর সন্তানদের প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে ২০০৮ সালে গড়ে উঠেছে মেঘনাপাড় ধীবর বিদ্যানিকেতন। স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন তৎকালীন লক্ষ্মীপুর সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষক ড. আকতারুজ্জামান। কয়েকজন বন্ধুর থেকে টাকা সংগ্রহ করে বাঁশ আর টিন দিয়ে নির্মাণ করেন প্রতিষ্ঠানটি। এরপর শিক্ষক ও জেলে সর্দারকে নিয়ে সম্প্রদায়টির দ্বারে দ্বারে গিয়েছেন। প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব বুঝিয়ে তাদের সন্তানদের ভর্তি করান স্কুলে। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত স্কুলমুখি করতে বিনামূল্যে টিফিন ব্যবস্থাসহ স্বল্প খরচে পড়ালেখা করার সুযোগ করে দিয়েছেন। এছাড়াও উৎসবগুলোতে দিয়েছেন বিভিন্ন উপহার।

স্কুলটি প্রতিষ্ঠার কয়েক বছর পর স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় বৃদ্ধি পেয়েছে পাঠকক্ষের সংখ্যা। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ৬টি পাঠকক্ষ ও ১টি অফিস কক্ষ এবং শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য রয়েছে একটি মাঠ। স্কুলটিতে প্রতিদিনই ৭ জন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পাঠদান দিয়ে থাকেন। বিদ্যালয়টির আয় ও পরিচালনা কমিটির সদস্যদের অনুদান থেকে দেওয়া হচ্ছে শিক্ষকদের বেতন। এখানে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ২৪৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। যার মধ্যে এই বছর সমাপনী পরীক্ষায় ৩৩ জন অংশগ্রহন করেন।

সুফিয়া আক্তার নামে এক ছাত্রী বলেন, পাঠ্য বইয়ের পড়ালেখার পাশাপাশি বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন ও গুরুজনদের সঙ্গে কিভাবে ব্যবহার করতে হবে- সবই শিখেছেন এই স্কুল থেকে। এখন তার স্বপ্ন পড়ালেখা শেষ করে শিক্ষক হওয়ার। শিক্ষা বঞ্চিতদের জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করার। লঞ্চঘাট ও নদী পাড়ে স্কুলটি হওয়ায় শব্দদূষণের কারনে তাদের পাঠদান ব্যহত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সুফিয়া।

মেঘনাপাড় ধীবর বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক জহিরুল ইসলাম বলেন, ভাসমান ও নদী পাড়ের জেলে পরিবারের সন্তানদের প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পাঠদান করছেন নিয়মিত। স্কুলটি বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ যায়গায় রয়েছে। যেকোন সময় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এজন্য নিরাপদ স্থানে বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ডা. আশফাকুর রহমান মামুন বলেন, ভাসমান জেলে সম্প্রদায়ের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ও তাদের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তিনি বিদ্যালয়ের চলমান সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্য স্থানীয় প্রশাসনসহ ধর্ণাঢ্যদের সহযোগিতা কামনা করেন।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল বলেন, ভাসমান জেলেদের সন্তানরা শিক্ষিত হচ্ছে ধীবর বিদ্যানিকেতনের মাধ্যমে। স্কুলটিতে পূর্বেও জেলা প্রশাসকগণ সাহায্য করেছেন। চলমান সমস্যাগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করে সমাধানে জন্য সহযোগিতা করবেন বলে জানান তিনি।

© Meghnapar  Foundation
Design & Developed BY JM IT SOLUTION